কৃষি ও খাদ্য উদ্যোক্তা: আসামের ভঙ্গুর অর্থনীতি এবং পরিবেশের পুনর্গঠন (In Bengali)

By স্নেহা গূটগুটিয়াonMar. 17, 2023in Environment and Ecology

(Krishi O Khadya Udoktya: Assamer Bhongur Orrthoniti Ebong Poribesher Ponorgathan) – Farm and Food Entrepreneurship: Rebuilding Assam’s fragile economy and ecology

লেখক: স্নেহা গূটগুটিয়া 

প্রাথমিক ভাষা (মূল ভাষার রচয়িতা স্নেহা গূটগুটিয়া)ইংরাজিতে রচিত 

ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন শ্রীতমা ভট্টাচার্য  

বিশেষভাবেবিকল্পসঙ্গম (Vikalp Sangam)-এরজন্যলেখা

ফার্ম-টু-ফুডের(Farm2Food) বিষয়ে 

জৈব চাষ, পুষ্টি এবং শিক্ষা হল একটি সমৃদ্ধশালী সমাজের তিনটি স্তম্ভ। এই ধারণাকে কেন্দ্র করে ফার্ম-টু-ফুড (Farm2Food) আসামের গ্রামীণ অঞ্চলের মহিলা ও ভবিষ্যত প্রজন্মের যুবসম্প্রদায়কে ক্ষমতায়নের কাজটি করে চলেছে। ফার্ম-টু-ফুড আসামের জোড়হাটা জেলা ভিত্তিক মুনাফাবিহীন একটি সামাজিক উদ্যোগ, খামার-নির্ভর সুস্থায়ী জীবিকা ব্যবস্থা সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে যারা সরকারি স্কুলগুলির এবং স্থানীয় গোষ্ঠীগুলির সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে কাজ করছে। কৃষি ও খাদ্য উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম প্রদান ও শিক্ষাদানের সহায়ক হিসাবে তারা কাজ করে। তাদের ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রাম ‘ফার্ম প্রিনিউর’-এর লক্ষ্য হল বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষার্থীদের পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় কৃষিকাজ শেখানোর মাধ্যমে জীবন শৈলীর শিক্ষা প্রদান করা। স্কুলগুলিতে নির্মিত এই পুষ্টি বাগানগুলি বিঞ্জান ও গণিতের পরীক্ষাগার হিসাবে  কাজ করে, এদিকে ক্লাসরুমে শেখানো নিয়ম-নীতি ও ধারণাগুলি  স্কুল শিক্ষকদের সাহায্যে জৈব চাষের প্রক্রিয়াতে প্রয়োগ করা হয়। এই বিষয়ে আগ্রহের ফলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আগের চেয়ে বেশ খানিকটা বেড়েছে। একবেলা সুষম আহারের ব্যবস্থা যেমন নিশ্চিত করা গেছে- অর্থাৎ বাগানে উৎপাদিত সবজি, দুপুরের খাবার বানাতে ব্যবহার করা হয়- ফলে পড়াশোনার মানও উন্নত হয়েছে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষার জন্য সহায়ক একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করতে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করে বীজ দান যাত্রা (বীজ দান ড্রাইভ) সংগঠিত করা হয়, যেসময় গ্রামের গুরুজনেরা আদিবাসী শষ্যের বীজ এবং এগুলি ফলানোর টিপস ভাগ করে নেন; এইভাবেই পরম্পরাগত ঞ্জান ভাগাভাগি হয়–ঞ্জানদান চলতে থাকে, পরে পিতা-মাতারা শ্রমদান করেন, অর্থাৎ স্বেচ্ছায় শ্রমদানের মাধ্যমে তাদের সন্তানের শিক্ষাকে আরও মজবুত করতে এই খামার নির্ভর কাজে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

ছবি ১: জগন্নাথ বড়ুয়া স্কুলের শিক্ষার্থীরা মাটির উচু আস্তরণ তৈরির জন্য ম্যাপ নিচ্ছে।
ছবির ঋণ স্বীকার: উদেষ্ণা কোনয়ার
ছবি২: শিক্ষকদেরসাথেসম্মিলিতউচ্চবিদ্যালয়েরছাত্রীরা। পুষ্টিরজন্যবাগানেএইআস্তরণগুলিবর্গাকার, বৃত্তাকারএবংআয়তক্ষেত্রাকারআকারেতৈরিকরাহয়যাতেশিক্ষার্থীদেরকেআকার, ক্ষেত্রফল, পরিধিইত্যাদিরমতোগুরুত্বপূর্ণগাণিতিকধারণাগুলিশেখানোযায়। ছবিরঋণস্বীকার: সুনীলসাইকিয়া 

স্কুলগুলির পাশাপাশি, ফার্ম-টু-ফুড বাড়িগুলিতেও পুষ্টি বাগান তৈরিতে মায়েদেরকে যুক্ত করার মাধ্যমে স্থানীয় গোষ্ঠীগুলির সাথে কাজ করছে এবং বাজারে বিক্রির জন্য ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির মতো ছোট আকারের সুস্থায়ী কৃষি ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে তাদেরকে সক্ষম করে তুলছে।  মায়েদের বিভিন্ন স্বনির্ভর দল (এসএইচজি) গঠন করার মাধ্যমে এটি সম্ভবপর হয়েছে। তবে, ‘ফার্ম প্রেনিউর’ এবং মায়েদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রোজেক্টগুলি কেবলমাত্র ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বাচ্চা ও তাদের পরিবারের সাথে পরিচালিত করা হয়। এছাড়াও, মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিবেশ সম্পর্কে দায়িত্বশীল করে তোলার জন্য এবং তাদের বিদ্যালয়ে ও সমাজে ‘পরিবর্তন-নির্মাতা’ হতে সাহায্য করতে ‘সলভ নিনজাস’ নামক একটি প্রোগ্রাম করা হচ্ছে। যুবক সম্প্রদায়কে তাদের মৌলিক অধিকার, কর্তব্য এবং পাশাপাশি ভারতীয় সংবিধানের বিধিবদ্ধ মূল্যবোধ সম্পর্কে আলোকিত করে সামাজিকভাবে আরও সচেতন করার লক্ষ্যে ‘জাগ্রিক’ নামক আরেকটি প্রোগ্রামের তদারকি করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি, সামাজিক বৈষম্য মোকাবিলা করতে এবং শিশুদের আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক মনোভাব গড়ে তুলতে বিভিন্ন কার্যক্রম রয়েছে। 

‘খামারএবংকৃষি’ উদ্যোগ (‘ফার্মঅ্যান্ডএগ্রি’ প্রেনিউর)

আসামের গ্রামীণ অঞ্চলগুলিতে  মূলত কৃষিনির্ভর অর্থনীতি, সম্মিলিতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দন নাথের মতে, “৭০-৮০% মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল, প্রতিটি পরিবারই কৃষিকাজে যুক্ত। তারা গরু, ছাগল ও মুরগি পালন করে। প্রায় ৪০% পরিবারের ছোটো চা বাগান রয়েছে। কেউ কেউ বাঁশ উৎপাদনের সঙ্গেও যুক্ত,” নাথবাবু আরো ব্যাখ্যা করে বলেন।“ 

“কেউ শিক্ষক, কেউ নার্স, কেউ কেউ ব্যাংকে চাকরি করে; কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত, এমনকি আমরাও তা করি। বেঁচে থাকার জন্য আমাদের খেতে হবে এবং যদি আমরা চাষ-আবাদ না করি তাহলে কি খাব!” ববিতা বোরা, যার স্বামী ভৈরব বোরা সরকারি স্কুল খনিকর উৎসব বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের শিক্ষক তিনি বলেন। 

তৃষ্ণা সাইকিয়া, আপ্পাম গ্রামের বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী, বিশদে ব্যাখ্যা করে বলল যে কিভাবে একটি বাতিল পলিস্টাইরিন মাছের বাক্স পুনরায় ব্যবহার করে ভার্মি কম্পোস্টের বাক্স তৈরি করা হয়। “ভার্মি-কম্পোস্টের একটি পলিস্টাইরিন বাক্স থেকে ৪০ দিনে ১৫ কিলোগ্রাম কম্পোস্ট পাওয়া যায় যা প্রতি কেজি ১০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়,” সুনীল সাইকিয়া, গত সাত বছর ধরে ফার্ম-টু-ফুডের প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর জানান, “ভার্মি কম্পোস্ট বিক্রি করে যে অর্থ আসে, তা শিক্ষাগত খাতে যে খরচ হয় তার কিছুটা বহন করে।” তৃষ্ণার বাবা, অজিত সাইকিয়া এই কথাগুলিকে সমর্থন করে বলেন যে, “বাড়িতে শাকসবজি ও ফল চাষ করে অর্থ সাশ্রয় হয়। অতিরিক্ত শাক-সবজি প্রতিবেশী বা অন্যান্য ব্যবসায়ীর কাছেও বিক্রি করা হয়। ভার্মি কম্পোস্টও বাজার থেকে কেনার প্রয়োজন হয় না এখন কারণ বাড়িতেই এটা তৈরি করা হয়। ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করে যে ধান চাষ করা হয় তা তুলনায় সুস্বাদুও হয়।” অজিত সাইকিয়া একজন কৃষক যিনি একটি চা বাগানে কাজ করেন এবং তার আরেকটি খামার রয়েছে যেখানে তিনি ধান ও সবজি চাষ করেন। 

মিড-ডে মিলের খাবার তৈরির জন্য পুষ্টি বাগানের শাক-সবজিও স্কুলে বিক্রি করা হয়। “প্রতিটি শিশুকে প্রতি খাবার পিছু সবজির জন্য প্রায় ১ টাকা থেকে ৬ টাকা অবধি সরকার কর্তৃক দেওয়া হয়ে থাকে,” ফার্ম-টু-ফুডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা দীপজ্যোতি সনু ব্রক্ষা বলেন। যদিও টাকা অনেক নয়, তবু তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এই টাকা যাওয়া বাধ্যতামূলক, এই ব্যাপারে তিনি জোর দিয়ে বলেন, “প্রথম থেকেই ভালো আর্থিক বিচার-বুদ্ধি তৈরি হওয়া উদ্যোক্তাদের জন্য জরুরি।’’ ফার্ম-টু-ফুড শিশুদেরকে তাদের মা-বাবার সাহায্যে নিজের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাহায্য করে।

হেড মাস্টারমশাই নাথবাবু জানেন যে এই ব্যাপারে দক্ষতা অর্জন করা কতটা জরুরি। “পুঁথিগত বিদ্যা ব্যবহারিক জীবনের জন্য পর্যাপ্ত নয়,” ফার্ম-টু-ফুডের সঙ্গে তার স্কুলের সংযুক্ত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি এই ব্যাপারে জোর দিয়ে বলেন। সুনীল সাইকিয়া মনে করেন যে তারা যে কৌশলগুলি ব্যবহার করেন, যেমন, কম জায়গায় চাষ করার জন্য উঁচু করে বানানো মাটির আস্তরণ, কম্পোস্টের জন্য ফেলে দেওয়া পলিস্টাইরিন বাক্স ব্যবহার করা, ইত্যাদি, স্থানীয় মানুষের সাথে ভাগ করে নেওয়া দরকার, যাদের মধ্যে অনেকেই দারিদ্র্য সীমানার নীচে রয়েছেন এবং তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত করার জন্য এই ধরনের কোনো তথ্য তাদের কাছে পৌঁছয়ে না। ফার্ম-টু-ফুডের আরেকজন প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর পার্থ প্রতিম বড়দলুই মনে করেন যে পড়াশোনায় ভালো করার জন্য শিশু এবং তাদের পরিবারে পুষ্টিজাত খাদ্য প্রয়োজন, অন্যথায় প্রায়শই দেখা যায় যে, “জীবনে তারা বেশিদূর অগ্রসর হতে পারে না,” অর্থনৈতিক সংস্থান হয় না এবং অসামাজিক কাজের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে। সুনীল সাইকিয়া (যিনি পূর্বে সর্বশিক্ষা অভিযানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন) এবং পার্থ বড়দলুই (যিনি চা বাগানের গোষ্ঠীগুলির খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টির মান নিয়ে গবেষণা করেছেন) উভয়ই উল্লিখিত শূণ্যতা পূরণের জন্য ক্লাসরুমের বাইরে এই ধরণের মজার জীবন কৌশলী শেখানোয় বিশ্বাসী। পাশাপাশি বাচ্চাদের সাথে তাদের কাজকর্মও তারা উপভোগ করেন। 

কোভিড-১৯এবংহোমস্টেবাগান

বোরা অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলে যে অন্যান্য শিশুদের সাথে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তার মেয়ে অনুষ্কা বিজ্ঞান প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছিল; যেখানে তার মেয়ে নিজস্ব বৈজ্ঞানিক প্রকল্প উপস্থাপন করেছে। কিন্তু এটাই একমাত্র প্রকল্প নয় যেটি অনুষ্কা করছে। কোভিড-১৯-এর লকডাউনের সময়ে অনুষ্কা এবং তার সহপাঠী শুভংকর দত্ত আরো অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে  () বাড়িতে হোমস্টে বাগান তৈরিতে মনোযোগী হয়েছিল। তাদের বাগানের ফসল শুধুমাত্র তাদের পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মেটাত, তা নয়, লকডাউনের সময় আয়ের উপায় হিসাবেও বিক্রি করা হত। “আমরা প্রথমে আমাদের স্কুলে উঁচু করে বানানো মাটির আস্তরণে জৈব চাষ শিখেছি, তারপরে এটা বাড়িতে শুরু করেছি,” অনুষ্কা ও শুভংকর বলে। বাড়িতে নিজে এই সমস্ত চাষ করে অনুষ্কা যে কতটা গর্বিত বোধ করে বলে এবং এগুলো সম্পূর্ণ জৈবিক হওয়ায় স্বাস্থ্যের জন্যেও ভালো। বড়ো হয়ে অনুষ্কা ও শুভংকর দুজনেই  নিজেদের পেশাগত কাজের পাশাপাশি কৃষিকাজ করতে চায়। লকডাউনের ফলে বাচ্চাদের হাতে   বাগান তৈরিতে ব্যয় করার মতো বেশ কিছুটা সময়  থাকার জন্য এই সমস্ত কিছু সম্ভবপর হয়েছে। শুভংকর দৈনিক মজুরি শ্রমিকদের দুর্দশার কথাও বলে, লকডাউনে অর্থনীতি সম্পূর্ণ থেমে যাওয়ার ফলে কোনো কাজকর্ম না থাকায় যাদেরকে বাড়িতে থাকতে হয়েছিল। তবে, পার্থ বড়দুলুই উল্লেখ করে বলেছেন যে, এই দুর্দশার সময়েও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুযোগ ছিল, কারণ মজদুররা এই সময়ে যে অতিরিক্ত সময় পেত তা বাড়ির বাগান তৈরিতে নিয়োগ করতে পেরেছিল, আগে যা একেবারেই সম্ভব ছিল না। 

ছবি৩: খানিকরগ্রামেরঅষ্টমশ্রেণিরছাত্রশুভঙ্করদত্ততারবাড়িরবাগানে। 
ছবিরঋণস্বীকার: সঙ্গীতাদত্ত

ছবি৪এবং৫ : ধুবউনিগ্রামেরঅষ্টমশ্রেণিরছাত্রীবিশ্বজিৎহাজারিকাএবংমোহানাটিংগ্রামেরনবমশ্রেণিরছাত্রীসুনিতাগঞ্জু, যথাক্রমেতাদেরবাড়িরবাগানে

ছবি৪এবং৫ : ধুবউনিগ্রামেরঅষ্টমশ্রেণিরছাত্রীবিশ্বজিৎহাজারিকাএবংমোহানাটিংগ্রামেরনবমশ্রেণিরছাত্রীসুনিতাগঞ্জু, যথাক্রমেতাদেরবাড়িরবাগানে

হোমস্টে বাগানের জন্য শিশুরা তাদের বাবা-মা এবং ‘ফার্ম-টু-ফুডের পরামর্শদাতাদের কাছ থেকে অনেকরকম সাহায্য পেয়েছে। লকডাউনের সময়ে শিশুদের মনো-সামাজিক সহায়তার জন্য পরামর্শদাতারা বেশ কিছু ক্রিয়কলাপ করেছিলেন। এই ক্রিয়াকলাপগুলোর মধ্যে যেমন ছিল ভারতীয় সংবিধানের ১৫টি নতুন শব্দ শেখা, করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে  আপৎকালিন অবস্থায় মানুষ ও পশুপাখিকে খাবার দেওয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য পোস্টার আকারে নিজেদের অঞ্চলগুলিতে সাঁটানো, এবং বর্জ্য পদার্থকে পুনরায় ব্যবহার করে নতুন কিছু তৈরি করা। অনুষ্কা বলে লকডাউনের সময়ে স্কুল বন্ধ থাকলেও সে মোটেও বিষন্নতা অনুভব করেনি কারণ “আমি কিছু না কিছু নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম যেমন আঁকা, চাষবাস ইত্যাদি।” “শিশুদের মানসিক চাপ, হতাশা বা উদ্বেগ তৈরি হতেই পারে,” পার্থ বড়দলুই বলেন কারণ লকডাউন অর্থনৈতিক সমস্যাকে আরো তীব্র করে তোলে যার সম্মুখীন হয় দারিদ্র পরিবারগুলি এবং পারিবারিক অবস্থাতেও এর প্রভাব পড়ে। যেহেতু নিয়মিত অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা ছিল তাই এই সময়ে শিশুদেরকে পড়াশোনাতেও সহায়তা হয়েছিল।

শুনতে খানিক অবাক লাগলেও, ২০১১ সালের সূচনাকাল থেকে, ফার্ম-টু-ফুড আসামের বিভিন্ন জেলা জুড়ে ৪৪৬টি স্কুলের সাথে কাজ করেছে, ৮৯২০ জন ছাত্রছাত্রীর অংশগ্রহণ সহ মোট ৩০,০০০ শিক্ষার্থীকে প্রভাবিত করেছে ()। ডিসেম্বর ২০১৮ সালে, ৩০টি সরকারি স্কুল প্রায় ৫০০ কিলোগ্রাম জৈব সবজি বিক্রি করেছে ()। ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে, মালোখাট গ্রামের একটি মায়েদের দল ২,১০০ কিলোগ্রামের বেশি ভার্মি কম্পোস্ট বিক্রি করেছিল ()। উদীয়মান কৃষকদের প্রায় ৭৯% নারী () এটা জেনে অবাক হওয়ার তেমন কিছু নেই যাদের মধ্যে অনেকেই আবার কৃষি-উদ্যোক্তা। ফার্ম-টু-ফুড অংশীদারিত্ব এবং সামর্থ্য নির্মাণের মাধ্যমে মেঘালয় ও দিল্লি সহ আরো কয়েকটি রাজ্যে নিজেদের বিস্তার ঘটাতে পেরেছে। সেখানকার বেশ কিছু স্কুলগুলিতে পরিস্থিতির সঙ্গে প্রাসঙ্গিকতা বজায়  রেখে তাদের পাঠ্যক্রমে ফার্ম-প্রেনিউর প্রোগ্রামটি পরিচালিত করা হচ্ছে।

আসামের বাস্তুসংস্থান ও অর্থনৈতি খুবই দূর্বল। রাজ্যে সংঘাতমূলক পরিস্থিতি, রুটি-রুজির কারণে সেখানকার জনসংখ্যার অনেকাংশকেই রাজ্যের বাইরে যেতে হয়, বন্যার কারণে জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, খাদ্য আমদানি হয় প্রতিবেশি রাজ্য থেকে, একচেটিয়া ভাবে চা-চাষ হয় বলে জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এইরকম পরিস্থিতিতে, ফার্ম-টু-ফুড আসামের গ্রামীণ জেলাগুলির সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত কয়েকটি জন-সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করছে-চা-বাগানের শ্রমিক শ্রেণি, মিশিং (আদিবাসী জনগোষ্ঠী), তপশিলি জাতি এবং মুশলিম সম্প্রদায়-একটি বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এক নিরবচ্ছিন্ন, সমৃদ্ধশালী, আত্মনির্ভরশীল এবং শান্তিপূর্ণ উত্তর-পূর্ব গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে। ফার্ম-টু-ফুডের উত্তরণমূলক কাজের পরিসর রয়েছে আসামেঃ পরিবেশগত ভাবে – জৈব চাষে যুক্ত করার মাধ্যমে এবং বিভিন্ন দেশীয় ফসলের বীজগুলোকে পুনরুদ্ধার করার মাধ্যমে; সামাজিকভাবে – প্রান্তিক জনগোষ্ঠীগুলির শিক্ষা ও পুষ্টির মান উন্নীত করে; অর্থনৈতিকভাবে – ‘খামার ও কৃষি’প্রেনিউর তৈরি করে; এবং সাংস্কৃতিক ভাবে – পরম্পরাগত জ্ঞানকে উজ্জীবিত রেখে। 

 

ছবি৬: ছাত্রদেরসাথেএকটিজুমমিটিংচলছেঅনুষ্কাবোরা, শুভঙ্করদত্তএবংফার্মটুফুডেরকোঅর্ডিনেটরপার্থপ্রতিমবড়দোলুই, কৃষ্ণালিহাজারিকাএবংসুনীলসাইকিয়া৷
ছবিরঋণস্বীকার: স্নেহাগুটগুটিয়া

* স্নেহাগুটগুটিয়াকল্পবৃক্ষ (Kalpavriksh), পুণেরএকজনসদস্যএবংবর্তমানেন্যাশনালইনস্টিটিউটঅফঅ্যাডভান্সডস্টাডিজ, বেঙ্গালুরুতেপিএইচডিকরছেন। 

তারসাথেযোগাযোগকরুন

Story Tags: , , , , ,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Loading...
%d bloggers like this: